Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বঙ্গবন্ধু ও কৃষিবিদ দিবস

বঙ্গবন্ধু ও কৃষিবিদ দিবস

ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি

মাননীয় মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রণালয়। www.moa.gov.bd

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এক সোনালি অধ্যায়ের নাম কৃষি। উৎপাদনশীলতা, আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশের জিডিপিতে কৃষি খাত (ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এবং বন) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং শ্রম শক্তির প্রায় অর্ধেক কর্মসংস্থান জোগান দেয়। কৃষি সামাজিক কর্মকাণ্ডের এক বিশেষ ক্ষেত্র যা জনগণের খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা, আয়ের সুযোগ সৃষ্টি, কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কাঁচামাল সরবরাহ এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ ছাড়া কৃষি বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যের বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ভোক্তাদের বাজারের চাহিদাভিত্তিক মালামালের উৎস। 

 

হাজার বছরের অবহেলিত ও শোষিত ছিল এ বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ও সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করেছিলেন কৃষির উন্নতিই হচ্ছে কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি। কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি মানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য হবে আরো প্রজ্বলিত। এদেশের উর্বর জমি, অবারিত প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিশ্রমী মানুষ, আমাদের গবেষণা সম্প্রসারণ কাজে সমন্বয় করতে পারলে আমরা খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করতে পারব। বর্তমান  কৃষিতে দেশের যে অনন্য সাফল্য তা বঙ্গবন্ধুরই চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনার ধারাবাহিকতা।

 

বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের পুনর্গঠনে প্রথমেই গুরুত্ব দেন কৃষি উন্নয়নের কাজে। ডাক দেন সবুজ বিপ্লবের। তিনি বলেছিলেন, ‘কৃষক ভাইদের প্রতি আমার অনুরোধ, কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে সবুজ বিপ্লব সফল করে তুলুন। বাংলাদেশকে খাদ্যে আত্মনির্ভর করে তুলুন।’ বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন, কৃষির উন্নতি ছাড়া এদেশের মানুষের মুক্তি আসতে পারে না। এজন্য কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ভূমিস্বত্ব আইন জারি করে পরিবার প্রতি ভূমি মালিকানা ৩৭৫ একর থেকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা সিলিং আরোপ করেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করে দেন। কৃষকের মাঝে খাস জমি বিতরণ, কৃষির উৎপাদন খরচ কমাতে ভর্তুকি মূল্যে সার, কীটনাশক, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি-উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করেন।  সেচ সুবিধা বাড়াতে সেচপাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় তিন গুণ। ধ্বংসপ্রাপ্ত কৃষি-অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি পাকিস্তানি আমলে রুজু করা ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকের মুক্তি দেন ও তাদের সব ঋণ মওকুফ করেন। যা ছিল কৃষি উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। 

 

কৃষির উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু কৃষি শিক্ষা ও কৃষি গবেষণার উপর জোর দেন। আর তা প্রতিফলিত হয় বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। সেখানে মোট ৩৩ কোটি টাকা কৃষি শিক্ষা ও কৃষি গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়। কৃষিশিক্ষা, গবেষণা, সম্প্রসারণ ও উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আয়োজন করেন। এ সময় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। আধুনিকায়ন হয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের। মৎস্য ও পশুসম্পদ ও চা উন্নয়ন ক্ষেত্রেও নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হয়। জাতির পিতার দূরদৃষ্টি প্রসূত উন্নয়ন ভাবনার আরও একটি উজ্জ্বল দিক হচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের কৃষিশিক্ষায় আকৃষ্ট করার জন্য ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষণা  দেয়া। তিনি জানতেন, কৃষির উন্নয়ন করতে হলে কৃষিতে মেধাবী মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে।  কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা ঘোষণাকালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আন্দোলন করছিস বলে আমি দাবি মেনে নিলাম তা নয়, আমি চাই ভালো ছাত্রছাত্রী কৃষি পড়ুক’ আমি তোদের দাবি মেনে নিলাম তোরা আমার মুখ রাখিস।’

 

এদেশের কৃষিবিদ সমাজ তাদের বোধে ও বিশ্বাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও অনুপ্রেরণা চির অটুট রাখতে ১৩ ফেব্রুয়ারি নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে কৃষিবিদ দিবস  উদ্যাপন করে আসছে। জাতির পিতার প্রত্যাশা পূরণে কৃষিবিদ সমাজ তাদের প্রতিভা, মেধা ও কর্মদক্ষতা, সর্বোচ্চ অঙ্গীকার ও আন্তরিকতার সাথে প্রয়োগে ব্রতী হয়ে উঠেন। সেই থেকে এ দেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ফসলের শত শত জাত উদ্ভাবন ও প্রবর্তন এবং উন্নত চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন। প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা, সহয়ক নীতি কাঠামো, কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, সার, বীজ, সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতির সফল প্রয়োগে কৃষি বিশেষ করে দানাদার খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। দানাদার ছাড়াও শাকসবজি, ফলমূল, আলু উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি বেড়ে চলছে। অন্যদিকে ডাল, তেল মসলার চাহিদা এখনও অনেকাংশ আমদানি নির্ভর হলেও স্বল্প জীবনকালের ডাল উদ্ভাবনের ফলে ইদানীং ধানভিত্তিক শস্যবিন্যাসের পাশাপাশি ডালশস্য স্থান করে নিচ্ছে। সরকারের নীতির ফলে হাইব্রিড ভুট্টা ও শাকসবজি উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফসলের নিবিড়তা গত পাঁচ বছরে শতকরা ১৯২ হতে ২১৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে কৃষিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পাট রপ্তানিতে ১ম, পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম উৎপাদনে ৭ম, আলু উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন কৃষিতে রোল মডেল। 

 

কৃষি এখন ঘাটতি উৎপাদন ব্যবস্থা হতে উদ্বৃত্ত ও বাণিজ্যিকীকরণ অভিমুখী। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য পরিবেশ সম্মতভাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, উচ্চ মূল্যের ফসল যেমন-কাজুবাদাম, কফি প্রভৃতি রপ্তানিমুখীকরণ, খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ। গবেষণার মাধ্যমে স্বল্প জীবনকালের প্রতিকূলতা সহিষ্ণু শস্যবিন্যাস উদ্ভাবন ও সফল প্রয়োগে কৃষি সমৃদ্ধ লাভ করছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয়েছে, যাতে আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার হিসাবে আমাদের সক্ষম উৎপাদন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব হয়। 

 

মুজিব শতবর্ষে করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন ‘আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে’  এবং ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’। এই দূরদর্শী নির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ সব দপ্তর/সংস্থা কৃষকের পাশে থেকে এপ্রিল-মে ২০২০ এ হাওড়ে বোরো ধান কাটা ও উত্তোলন নিশ্চিত করে। যা সমকালীন ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। এ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক সংকট নিরসন ও দ্রুত ধান কাটা নিশ্চিতকরণে দুইশত কোটি টাকা জরুরিভিত্তিতে বরাদ্দ প্রদান করেন, যা দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় ১৩০০টি উন্নতমানের কম্বাইন হার্ভেস্টার, ৯৩৪টি রিপারসহ প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি হাওড় অঞ্চলসহ সারা দেশে কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হয়। ফলে বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়ে সর্বোচ্চ বোরো ধান ঘরে তুলে বাংলাদেশের জনগণ খাদ্যে নিরাপত্তার স্বস্তি পায়। পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বসতবাড়ি, আঙিনার সামনে সরকারি প্রণোদনায়  প্রতি ইউনিয়নে ৩২টি করে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে নতুনভাবে প্রতি ইউনিয়নে আরও ১০০টি করে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে চলমান। একই ভাবে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতেও প্রভূত উন্নতি হয়েছে। গ্রামে গ্রামে পোলট্রি ফার্ম, গাভী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদের এবং পুকুর, বিল, বাঁওড় এবং মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষের কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ায় এ খাতেও সাফল্য অর্জন হয়েছে। সমুদ্র জয়ের ফলে সুনীল অর্থনীতির মাধ্যমে মেরিন ফিশারিজ খাতের উন্নয়নে বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

 

কোভিড ১৯সহ প্রাকৃতিক বৈরিতার সাথে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী কৃষি প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন কৌশল প্রবর্তনে কৃষক ও কৃষিবিদ সমাজ কাঁধে কাঁধমিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সময়ের পালাক্রমে বসতবাড়িতে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পারিবারিক পুষ্টির প্রাপ্যতা বেড়েছে । এখন কৃষকের ঘরবাড়ি, পোশাক পরিচ্ছদ, শিক্ষা দীক্ষা, বিনোদনসহ জীবনযাত্রার সর্বত্রই লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। যা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের উদার ও কৃষিবান্ধব সময়োপযোগী কার্যক্রম নীতি গ্রহণ ও তার সঠিক বাস্তবায়নের ফলে। পাশাপাশি এই উজ্জ্বল অর্জনের মহানায়ক কৃষক। সহনায়ক হিসেবে কাজ করেছে কৃষিবিদ সমাজ। আর এসব কিছুর মূলে আছে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত যা কৃষিবিদ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য।

 

পরিশেষে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১ এর ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা ২০৩০ অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় এবং পাশাপাশি কৃষি সেক্টরে অর্জনের এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য কৃষিবিদদের ভূমিকা ভবিষ্যতে আরো শানিত ও জোরদার করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

 

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon